প্রকাশকালঃ 2025-11-03 11:11:20

প্রায় তিন দশক ধরে খুলনা মহানগর বিএনপির রাজনীতি ও নজরুল ইসলাম মঞ্জু ছিলেন যেন একে অপরের পরিপূরক। কিন্তু ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঘটে সেই সম্পর্কের ছন্দপতন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ অমান্য করে সংবাদ সম্মেলন করার জেরে বিএনপি তাকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। সেই থেকে শুরু হয় দীর্ঘ তিন বছরের অপেক্ষা ও সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা।
এই সময়ের মধ্যে মঞ্জু একের পর এক চিঠি পাঠান তারেক রহমানের কাছে, তুলে ধরেন দলের দুরবস্থা ও নিজের অবস্থান। পদ-পদবী ছাড়াই অংশ নেন দলীয় কর্মসূচিতে, বড় বড় শোডাউন করে কেন্দ্রের নজর কাড়ারও চেষ্টা চালান। অপেক্ষা করছিলেন—কবে আসবে কাঙ্ক্ষিত সেই ফোন কল।
অবশেষে তিন বছর পর, রোববার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে লন্ডন থেকে আসে সেই প্রতীক্ষিত কল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফোনে জানান, খুলনা-২ আসনে ধানের শীষের বিজয়ের জন্য এখনই কাজ শুরু করতে হবে। তবে তার আগে ভেতরের বিভাজন দূর করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এরপর থেকেই অভিনন্দনের বন্যায় ভাসছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা।
বর্তমানে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছেন মঞ্জু। গত ২৭ অক্টোবর তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রার্থীদের মতবিনিময় সভায় অংশ নেন এবং ওই রাতেই খুলনায় ফেরেন। পরদিন থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
সমকালকে তিনি বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে খুলনা-২ আসনে ধানের শীষের বিজয়ের জন্য কাজ শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন।’ নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই ফেসবুকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কয়েকটি বার্তাও প্রকাশ করেন তিনি।
খুলনা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে ছাত্রদলের কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে যোগ দেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ১৯৮৭ সালে খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হন এবং ১৯৯২ সালের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে টানা ১৭ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।
তবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরেই আসে রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা। ৯ ডিসেম্বর ঘোষিত তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি থেকে বাদ পড়েন মঞ্জু ও তাঁর অনুসারীরা। ১২ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানালে ১৪ ডিসেম্বর তাঁকে শোকজ করা হয় এবং ২৫ ডিসেম্বর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মঞ্জুর দীর্ঘ ৪৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনের এই মোড় অনেকের কাছেই অগ্রহণযোগ্য মনে হয়। পরদিনই শুরু হয় গণপদত্যাগ। মহানগর বিএনপি, পাঁচ থানা ও বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতা পদত্যাগ করেন। এরপর টানা তিন বছর বিএনপির সব পদ-পদবীর বাইরে থাকলেও কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নেন তিনি। এমনকি জুলাইয়ের আন্দোলনেও রাজপথে ছিলেন সক্রিয়ভাবে।
খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “পদ না থাকলেও নজরুল ইসলাম মঞ্জু রাজপথ ছাড়েননি। তার গাড়িতে হামলা হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে—তবুও তিনি মাঠে ছিলেন। তারেক রহমানের ফোন প্রমাণ করেছে, রাজপথ কখনও বেঈমানী করে না।”
তবে বর্তমান মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন বলেন, “ফোনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। প্রার্থিতার বিষয়েও আমাকে কিছু জানানো হয়নি।”