প্রকাশকালঃ ৩ ডিসেম্বর ২০২৫, দুপুর ১২:১০ সময়

উত্তরাঞ্চলের সম্ভাবনাময় নৌপথ চিলমারী–রৌমারী রুটে ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত দুই বছরে মোট ৭৭৪ দিনের মধ্যে ফেরি চলেছে মাত্র ৪০৫ দিন। বাকি ৩৬৯ দিন ফেরি বন্ধ থাকায় যাত্রী, পরিবহন চালক, কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে চরমভাবে। বাধ্য হয়ে তাদের বিকল্প দীর্ঘপথে যাতায়াত করতে হচ্ছে, ফলে বেড়েছে সময়, খরচ ও আর্থিক ক্ষতি।
ঘাটসংশ্লিষ্টদের মতে, একদিকে ব্রহ্মপুত্রের দ্রুত নাব্যতা হ্রাস, অন্যদিকে ঘাট ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে নিয়মিত ফেরি সার্ভিস চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ড্রেজিং করা হলেও উজান থেকে নামা পলিতে স্বল্প সময়ের মধ্যেই চর জেগে ওঠে। বর্ষায় দেখা দেয় ভয়াবহ ভাঙন।
কুড়িগ্রাম বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ফেরি সার্ভিস চালুর পর কুঞ্জলতা ও বেগম সুফিয়া কামাল—দুটি ফেরি রুটে নামানো হয়। পরে বেগম সুফিয়া কামাল সরিয়ে তার স্থলে কদম ফেরি যুক্ত হয়।
চিলমারী ঘাটের নথি অনুসারে—
২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর: ১০৪ দিনের মধ্যে ৯৭ দিন ফেরি চলেছে; গাড়ি পারাপার হয়েছে ২,৮৮৫টি।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর: ৩৬৫ দিনের মধ্যে ২৪১ দিন ফেরি চলেছে; গাড়ি পারাপার ৬,৫৬২টি।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর: ২১৯ দিনের মধ্যে মাত্র ৬৭ দিন ফেরি চালু ছিল; এ সময়ে পারাপার হয়েছে ২,২৫০টি গাড়ি।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চালুর প্রথম বছর ফেরি থেমেছিল মাত্র ৭ দিন। কিন্তু ২০২৪ সালে বন্ধ থাকে ১২৬ দিন, আর ২০২৫ সালে এ বিড়ম্বনা আরও বেড়ে যায়—অক্টোবর পর্যন্তই ফেরি বন্ধ ছিল ১৫২ দিন।
চিলমারী ফেরিঘাটের ম্যানেজার প্রফুল্ল চৌহান বলেন,
“ফেরি নিয়মিত চালানো না গেলে বিড়ম্বনা থাকবেই। তবে বন্ধের আগের দিন আমরা মোটরমালিক সমিতিগুলোকে অবহিত করি।”
বাংলাদেশ রেল, নৌ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান বলেন,
“চিলমারীর মতো গুরুত্বপূর্ণ রুট টিকিয়ে রাখতে হলে সাময়িক উদ্যোগ নয়, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত বাজেট জরুরি।”
কুড়িগ্রাম মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের চিলমারী শাখার সভাপতি মো. সোহেল মিয়া জানান,
“ফেরিঘাট বন্ধ থাকায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহন—উভয় ক্ষেত্রেই বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। বিকল্প পথ ঘুরে যেতে সময় ও খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।”
বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন,
“চিলমারী ফেরি রুটের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭ কিলোমিটার, যা দেশে সবচেয়ে বড়। বর্তমানে চারটি ড্রেজার কাজ চালাচ্ছে। ড্রেজার সংখ্যা বাড়ানো গেলে রুট নিয়মিত সচল রাখা সম্ভব।”