প্রকাশকালঃ ৬ ডিসেম্বর ২০২৫, দুপুর ৩:৩৮ সময়

আবুল কালাম আজাদ ভূঁইয়া, কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লায় সুষ্ঠু নির্বাচন, জবাবদিহিমূলক প্রশাসন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ বিষয়ে নাগরিক মতামত তুলে ধরতে এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় নগরীর হোটেল ওয়েসিসের হলরুমে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে সুজন—সুশাসনের জন্য নাগরিক কুমিল্লা জেলা ও মহানগর কমিটি এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দি হাঙ্গার প্রজেক্টের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. নাছির উদ্দীন।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলি আহসান টিটু। পরে সুশীল সমাজ, শিক্ষাবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা আলোচনা অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকট, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ এবং নির্বাচন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে জনগণের ভোটাধিকার ব্যাহত হচ্ছে। তাদের মতে, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন গণতান্ত্রিক চর্চা থেকে বিচ্যুত হয়েছে, যা নাগরিকের আস্থাকে দুর্বল করেছে।
সনাক কুমিল্লার সভাপতি নিখিল চন্দ্র রায় বলেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি।
কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক দুলাল বলেন, “দলে দলে গণতন্ত্র না থাকলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় উদ্বেগ বাড়ছে। কথায় গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও তার বাস্তব প্রয়োগ নেই।”
কুমিল্লা সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ড. আলি হোসেন চৌধুরী বলেন,
“মানুষ এখন রাষ্ট্র নিয়ে ভাবছে—এটাই আশার দিক। গণভোটের চারটি কঠোর শর্ত সহজ করতে হবে। এমপিদের জমিদারি প্রথা বন্ধ করতে হবে; তারা জনগণকে প্রজা ভাবতে পারেন না। মনোনয়ন প্রক্রিয়া বদলাতে হবে, যাতে সৎ ও যোগ্য মানুষ সামনে আসতে পারে। প্রতিপক্ষকে গ্রেপ্তার করে কোণঠাসা করার সংস্কৃতিও বন্ধ হওয়া জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “জনগণ দেশের মালিক—এই বোধ ফিরিয়ে আনতে হবে। জাতীয় সমঝোতা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ছাড়া উত্তরণ সম্ভব নয়।”
সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ শাহ আলমগীর খান বলেন, “একজন নারী ১২৮ বার ভোট দিয়েছে—এমন অস্বাভাবিক ঘটনা থেকে দেশকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেদের মধ্যেই পরিবর্তন আনতে হবে।”
বক্তারা আরও জানান, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সুষ্ঠু হয়নি। ফলে জনআস্থা ক্রমেই কমছে। তারা গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য কয়েকটি বিষয়কে জরুরি বলে উল্লেখ করেন—
সব দলের সমান সুযোগ
প্রশাসনের নিরপেক্ষতা
নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ স্বাধীনতা
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেশাদারিত্ব
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা
নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা
রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন দৈনিক নয়াদিগন্তের জেলা প্রতিনিধি মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী, ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র মো. আবু সাঈদসহ প্রায় অর্ধশত অংশগ্রহণকারী।
বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, নাগরিক সমাজের এমন আলোচনা দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।