প্রকাশকালঃ ৯ নভেম্বর ২০২৫, বিকাল ৬:৫১ সময়

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে একের পর এক চুরি, জবরদখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাহিদ ইস্তিয়াক সিকদার ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংগঠন থেকে বাদ পড়ার পরও তিনি ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে এলাকায় দাপট দেখাচ্ছেন এবং নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছেন।
৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই রাহিদ ইস্তিয়াক আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বন্দরের বিভিন্ন এলাকায় আজমেরী ওসমান বাহিনীর সহযোগীদের আশ্রয় দিচ্ছেন। অতীতে ওই বাহিনীর কাছ থেকে আশ্রিত থাকা রাহিদ এখন নিজেই তাদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য রাসেল মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি তার লিজ নেওয়া একটি পুকুর থেকে রাহিদ ও তার সহযোগীরা প্রায় ২০–২৫ লাখ টাকার মাছ তুলে নিয়ে গেছে।
তিনি জানান, “আমার ফুফাতো ভাই রেলওয়ের কাছ থেকে পুকুরটি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছিলেন। ৮ সেপ্টেম্বর রাতে রাহিদ স্থানীয় জাতীয় পার্টির সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে জাল ফেলে মাছ ধরে নিয়ে যায়। থানায় অভিযোগ করেও কোনো ব্যবস্থা পাইনি। পরে রাহিদের বাবার আশ্বাসে কিছুটা শান্ত হয়েছিলাম, কিন্তু কয়েকদিন পর তারা আবার মাছ ধরতে আসে।”
কাইতাখালী এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ (৪৫) জানান, সম্প্রতি রাহিদ সিকদার বাহিনী তাকে রাস্তায় ফেলে মারধর করে। আহত অবস্থায় তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন ও থানায় অভিযোগ করেন।
এছাড়া আমিরাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন অভিযোগ করেন, রাহিদ, আনিল সিকদার ও দিদারুল আলমসহ ৩০–৪০ জন তার ৬৫ শতাংশ জমি দখলের চেষ্টা করছে এবং তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।
কুরবানির ঈদের সময় কাইতাখালী ঘাটে ট্রলারে গরু আনলোড করার সময় রাহিদ সিকদার ও তার সহযোগীরা অস্ত্র ঠেকিয়ে গরু ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ঘটনাটি ভিডিও করতে গেলে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর নির্মম হামলা চালানো হয়।
তাদের মোবাইল, মানিব্যাগ, ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মারধর করা হয়।
পরে থানায় অভিযোগ করা হলেও শুরুতে বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বিষয়টি এড়িয়ে যান বলে অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে মামলা হলেও পরে থানায় জোরপূর্বক আপসনামা স্বাক্ষর করানো হয়।
স্থানীয়দের দাবি, বন্দর এলাকায় আজমেরী ওসমানের প্রভাব বিস্তারে এখনো সিকদার পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকারের পরিবর্তনের পরও রাহিদের ছত্রছায়ায় ঐসব সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি তিনি মোটরসাইকেল বহর নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন এবং ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন বলেও জানা গেছে।
রাহিদ ইস্তিয়াক সিকদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বন্দরবাসীর দাবি, রাহিদ ইস্তিয়াক ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে রাজনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছেন।
অনেকে তাকে এখন ব্যঙ্গাত্মকভাবে বলছেন —
👉 “ছাত্রদলের অভিশাপ রাহিদ।”